বাল্যবিয়ের রাতেই শ্বশুরবাড়ি থেকে ছাত্রীর লাশ উদ্ধার

Loading

আশরাফ হোসেন পল্টু,মাগুরা প্রতিনিধি : মাগুরার শ্রীপুর উপজেলায় বাল্যবিয়ের রাতেই শ্বশুরবাড়ি থেকে এক কলেজছাত্রী নববধূর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার (১০ এপ্রিল) রাতে বিয়ের কিছুক্ষণ পরেই তার মরদেহ একটি আমগাছে ঝুলতে দেখা যায়। ঝুলন্ত লাশ গাছ থেকে নামানোর পর তা উদ্ধার করেছে শ্রীপুর থানা পুলিশ। নিহত নাম মেঘনা খাতুন।

জানা গেছে, নিহত নববধূ কলেজছাত্রীর নাম মেঘনা খাতুন ( ১৬)। সে দাইরপোল গ্রামের ফজলুর রহমানের (হকার ফজলু) ছোট মেয়ে ও শ্রীপুর সরকারি কলেজে ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী।

জানা যায়, গত ৭ এপ্রিল দাইরপোল গ্রামের চঞ্চল শিকদারের ছেলে আরাফাত হোসেন সাব্বির বাসা থেকে পালিয়ে কলেজছাত্রী মেঘনা খাতুনকে ২০ হাজার টাকা দেনমোহরে বিয়ে করে। তাদের দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। বিয়ের খবর পারিবারিক ভাবে জানাজানি হলে দুই পরিবারের মধ্যে বিবাদের সৃষ্টি হয়। গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করা হচ্ছিলো বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে শনিবার (১০ এপ্রিল) রাতে ছেলে পক্ষের লোকজনের উপস্থিতিতে তাদের সামাজিকভাবে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট পরই নববধু লাশ তার শ্বশুরবাড়ির আঙ্গিনায় থাকা আম গাছের ডালে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায় শশুরবাড়ির লোকজন। সাথেসাথে শ্রীপুর থানা পুলিশকে খবর দিলে তারা লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য থানায় নিয়ে যায়।

নিহত নববধুর বাবা ফজলুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, গত ৭ তারিখের আমার মেয়েকে চঞ্চল শিকদারের ছেলে সাব্বির শিকদার নিয়ে যায়। পরে বাড়িতে ফিরিয়ে দিতে চায়। আমি তখন প্রশাসনসহ তার বাড়িতে ফেরত পাঠাই। সেই রাত্রে আমার মেয়েকে তাদের বাড়ি রেখে পরের দিন বেলা ১০ টায় মাগুরা নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা কাবিন করে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। পরে, গতকাল শনিবার (১১ এপ্রিল) রাতে সে আমার মেয়েকে আবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করে। বিয়ের অনুষ্ঠানের পরই হঠাৎ চিল্লাচিল্লির আওয়াজ শুনতে পাই এবং আমরা সবাই আমার মেয়ের শশুর বাড়িতে যাই। মেয়ে যখন গাছে ঝুলে ছিলো তখন আমরা গিয়ে দেখি ছেলের বাবা, ছেলের মা, আর ছেলে ঝুলন্ত শরীর নিয়ে টানাটানি করছে। প্রশাসন যাওয়ার আগেই তারা লাশ নামিয়ে মাথায় পানি ঢালেন তারা।

মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বাবা ফজলুর রহমান। তিনি বলেন, জনগণের কাছে, জনপ্রতিনিধিদের কাছে, চেয়ারম্যানের কাছে, আমার মেয়ের হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাই। যেন আমার মত আর কোন বাবার মেয়েকে এই রকম নিষ্ঠুর হত্যার শিকার না হতে হয়। নববধু মেঘনার মা শিউলি খাতুন ও বড় চাচা মেঘনার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।

এ বিষয়ে শ্রীপুর থানা ইনচার্জ সুকদেব রায় দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, এ ঘটনা আত্মহত্যা বা পরিকল্পিত খুন সেটি জানার জন্য লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে আসল ঘটনা সম্পর্কে আমরা জানতে পারবো। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতিমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বর আরাফাত হোসেন সাব্বির, বাবা চঞ্চল শিকদার, ও বরের মাকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।