নিজেস্ব প্রতিবেদক ঃ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যার একদিন আগে তাকে মেরে হল থেকে বের করার নির্দেশ দেয় বুয়েটের ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন।
তিনি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের মেসেঞ্জারে শেরে বাংলা হল শাখা ছাত্রলীগের ১৬তম ব্যাচের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন এমন তথ্যই অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
জানা গেছে, বুয়েট ও শেরেবাংলা হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে তৈরি ‘এসবিএইচএসএল ১৫+১৬’নামে ফেসবুকের একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে গত শনিবার (৫ অক্টোবর) বেলা ১২টা ৪৭ মিনিটে এমনই নির্দেশ দেন তিনি।
ওই মেসেঞ্জার গ্রুপে গত ৫ অক্টোবর দুপুর ১২টা ৪৭ মিনিটে ১৬তম ব্যাচের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মেহেদী হাসান রবিন লেখেন, ‘১৭-এর আবরার ফাহাদকে মেরে হল থেকে বের করে দিবি দ্রুত; এর আগেও বলছিলাম; তোদের তো দেখি কোনও বিগারই নাই; শিবির চেক দিতে বলছিলাম; দুই দিন সময় দিলাম।’
পরে তিনি আরও লেখেন, ‘দরকারে ১৬ ব্যাচের মনিরের সঙ্গে কথা বলিস; ও আরও কিছু ইনফো (তথ্য) দিবে শিবির ইনভলভমেন্টের ব্যাপারে।
এর উত্তরে ১৬তম ব্যাচের মনিরুজ্জামান মনি লেখেন, ‘ওকে ভাই’। পরদিন রোববার ৭টা ৫২ মিনিটে মনির গ্রুপে লেখেন, ‘নিচে নাম সবাই’।
এরপরই রাত ৮টা ১৩ মিনিটে আবরার ফাহাদকে তার মোবাইল ফোন-ল্যাপটপসহ রুম থেকে ডেকে নিয়ে যায় তানিম, বিল্লাহ, অভি, সাইফুল, রবিন, জিয়ন ও অনিক। পরে সেখানে তার ফোন এবং ল্যাপটপ তারা চেক করেন।
বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা পরবর্তীতে রাত ১২ টা ৩৮ মিনিটে এই গ্রুপে লেখেন, আবরার ফাহাদ কি হলে আছে?
তার জবাবে শামসুল ও সজীব নামে ২ জন লেখেন, ২০১১-তে আছে।
এই মেসেঞ্জার গ্রুপের অন্য আরেকটি কথোকথনে অমিত সাহা লিখেছেন, আবরার ফাহাদরে ধরছিলি তোরা?।
জবাবে ইফতি বলেন, হ।
উত্তরে অমিত আবারো লেখেন, বের করছোস?
প্রতিউত্তরে ইফতি পাল্টা প্রশ্ন করেন। তিনি লেখেন, কি হল থেকে নাকি স্বীকারোক্তি?
এর উত্তরে অমিত লেখেন, স্বীকার করলে তো বের করা উচিত।
গ্রুপ মেসেঞ্জারে এর ঠিক পরেই ইফতি লেখেন, মরে যাচ্ছে; মার বেশি হয়ে গেছে।
জবাবে অমিত লেখেন, বাট তাকে তো লিগ্যালি বের করা যায়।
এর জবাবে একটি ইমোজি পাঠান ইফতি। পরে এই দুজনের আর কোনও কথোপকথন পাওয়া যায়নি।
ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপে এই কথোপকথন প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন বলেন, আমরা সব তথ্য যাচাই-বাছাই করে এই হত্যাকাণ্ড তদন্ত করছি। কথোপকথনের বিষয়টিও যাচাই-বাছাই চলছে।
উল্লেখ্য, রোববার (৬ অক্টোবর) রাতে আবরারকে হত্যার পরদিন সোমবার (৭ অক্টোবর) রাজধানীর চকবাজার থানায় মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।