কাল থেকে কুমিল্লা টাউল হলে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিত’র সম্মেলন
এ আর আহমেদ হোসাইন,কুমিল্লা প্রতিনিধি :আগামীকাল বৃহস্পতি থেকে দু’দিন ব্যাপী ‘বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতি’র ১০ম জাতীয় সম্মেলন কুমিল্লা টাউনহল ময়দানে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে সম্মেলনকে ঘিরে তোরণ, পোষ্টার, ব্যানার, দেয়াল লিখন, ফ্যাষ্টুন সহ নানা প্রচারনায় কুমিল্লা মহানগরকে সু-সজ্জিত করা হয়েছে। সারা দেশ থেকে আগত হাজার হাজার শ্রমজীবী নারী- পুরুষ লাল পতাকা হাতে নিয়ে কুমিল্লা টাউনহল ময়দানকে সমবেত হবে।
বেলা ২টায় টায় টাউন হল ময়দানে উক্ত সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন ‘বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতি’র প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক, সাবেক ডাকসুর ভিপি বর্তমান বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। উদ্ভোধনীর পর একটি বর্নাঢ্য শোভাযাত্রায় কুমিল্লা মহানগরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুনঃরায় টাউন হল য়দানে এসে শেষ হবে।
সম্মেলনে কেন্দ্রীয়, জেলা, উপজেলার নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিদেশী অতিথিদের মধ্যে থাকবেন,- ভারতের ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের জাতীয় সম্পাদক নির্মল ভিজেন্দ্রা সিং, সর্ব ভারতীয় কৃষি শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি আমির পাত্র, যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক বিক্রম সিং, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বিধান সভার সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধূরী, পাকিস্তানের কৃষক সভার সহ-সভাপতি দামরো মাল, সাংস্কৃতিক সম্পাদক দয়াল দাস ও নিখিল নেপাল কৃষক ফেডারেশনের স্থায়ী কমিটির সদস্য বালাদেব চৌধূরী প্রমূখ ব্যক্তিবর্গ উপস্থি থাকবেন।
সম্মেলনে গণসঙ্গীত পরিবেশন করবেন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের শিল্পী রাজা হাসান, বাংলাদেশের পল্লী গানের শিল্পী জহির হাসান প্রমূখ। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর নাট্যদল বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন নিয়ে রচিত যাত্রা ‘বিয়াল্লিশের পালা’ পরিবেশন করবে।
‘বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতি’র দশম জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের চেয়ারম্যান পরেশ কর বলেন, সম্মেলনকে ঘিরে আমাদের সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। নিরাপত্তায় প্রশাসনের লোকজন ছাড়াও আমাদের নিজস্ব সেচ্ছা সেবক দল কাজ করবে। একটি মেডিকেল টিম সার্বক্ষনিক কাজ করবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন সরকরি বরাদ্ধ লুটপাটকারীদের প্রতিরোধ, দেশের সবচেয়ে অবহেলিত দরিদ্র মানুষগুলো বাঁচার জন্য রেশন, পেনশন, কাজ-মজুরী, পূর্ণাঙ্গ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গ্রামাঞ্চলে জোরদার গণআন্দোলন গড়ে তোলাই আমাদের এ সম্মেলনের লক্ষ্য। তিনি গর্বের সাথে আরো বলেন, ১৯৮১সালের ১৮মার্চ সংগঠনটির প্রতিষ্ঠা থেকে গত ৩৯বছর ক্ষেতমজুর সমিতি এদেশের গ্রামের গরিব, ক্ষেতমজুর, গ্রামীণ শ্রমজীবী নারী-পুরুষের অধিকার আদায়ের সংগঠনে পরিনত হয়েছে। ক্ষেতমজুর সমিতির আন্দোলনের ফলে খাস জমি ১ টাকা সালামির বিনিময়ে ভূমিহীন ক্ষেতমজুর স্বামী-স্ত্রীর নামে রেজিষ্ট্রি করে দেয়ার আইন তৈরী হয়েছে। সারা দেশে ক্ষেতমজুর সমিতির নেতৃত্বে হাজার হাজার একর খাস জমি এবং ৩০ হাজার খাস পুকুরে লাল নিশান টানিয়ে দিয়ে ক্ষেত মজুররা দখলে নিয়েছে। ১নং খতিয়ানে খাস জমির উপর ভূমিহীন ক্ষেত মজুরদের আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়।
প্রতিবছর গ্রামের গরিবদের জন্য নানা ধরনের কর্মসূচী ও প্রকল্পে বিপুল পরিমান বরাদ্ধ দেয়া হয়, কিন্তু এসকল বরাদ্ধ প্রকৃত ভূমিহী বা প্রাপকরা পান না। ক্ষমতাসীন শ্রেণী, নেতা- কর্মীরা প্রশাসনের যোগশাজসে আত্মসাৎ করে। তিনি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচীর অধিনে বাদ্ধকুত অর্থ যাতে চেয়ারম্যান মেম্বার আত্মসাৎ করতে না পারে তার জন্য গ্রামাঞ্চলে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক দেন।
১৯৩৮ সালে কুমিল্লায় সারা ভারত কৃষক সভার তৃতীয় সর্বভারতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ৮২বছর পর আজ গ্রামের গরিব মানুষদের সংগঠন বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির ১০ম জাতীয় সম্মেলন কুমিল্লা টাউন হল ময়দানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।