ঝালকাঠির করোনা প্রকট- ক্রেতা ও পর্যটক নেই ভিমরুলি ভাসমান হাটে
সৈয়দ রুবেল, ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ করোনায় প্রভাব ফেলেছে ভীমরুলি ও আটঘর-কুড়িয়ানার ঐতিহ্যবাহী ভাসমান বাজারেও। পাইকারদের আনাগোনা কম। নেই কোনো পর্যটক। এতে হতাশ হয়ে পড়েছেন স্থানীয় চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
ভাসমান এসব হাট-বাজার কেন্দ্রিক গড়ে ওঠা পর্যটন ব্যবসায় নেমেছে ধস। তবে পেয়ারার ভরা মৌসুম শুরু হয়ে গেলে অল্প সময়ের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের মতে, কোরবানির ঈদের আগেই ঝালকাঠি জেলার ভীমরুলি ও পিরোজপুর জেলার আটঘর-কুড়িয়ানার ভাসমান বাজারে জমজমাট ভাব ফিরে আসবে। এতে দ্বিগুণ কর্মচঞ্চল হয়ে উঠবে ভাসমান বাজার ও বাজার কেন্দ্রিক আশপাশের এলাকা।
ভীমরুলি ও আটঘর-কুড়িয়ানা বাজার ঘুরে দেখা যায়, বিগত সময়ের চেয়ে অনেকটাই কমে গেছে ভাসমান বাজার কেন্দ্রিক সাধারণ মানুষের আনাগোনা। বিশেষ করে ঘুরতে আসা মানুষগুলোকে ইচ্ছে করলে গুনে বের করা যায়, এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে । অথচ বর্ষার শুরুর সময় থেকেই ভ্রমণপিপাসু মানুষের উপস্থিতিতে জমজমাট থাকে ভীমরুলি ও আটঘর-কুড়িয়ানার ভাসমান বাজার। পর্যটক না থাকায় সড়কপথের যানবাহনগুলোতে যেমন চাপ নেই, তেমন খালের ঘাটে নৌকা ও ইঞ্জিন চালিত ট্রলার পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
আটঘর-কুড়িয়ানার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত কয়েক বছর ধরে ভাসমান বাজারে বেশকিছু ব্যবসার প্রসার ঘটেছে। ঘুরে বেড়ানোর জন্য নৌকা ও ইঞ্জিন চালিত ট্রলার এবং সড়কপথে যাতায়াতের জন্য বিভিন্ন পরিবহনের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে পর্যটকদের খাওয়া-দাওয়ার জন্য দোকানের সংখ্যাও। ফলে পর্যটনখাত ঘিরে কিছু মানুষের কর্মসংস্থানও হয়েছে।
তবে করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে গোটা দেশে অঘোষিত লকডাউন দেওয়া হলে সে সময়ে পর্যটকের আনাগোনা বন্ধ ছিল। লকডাউন শেষে এখন যারা আসছেন তাদের সংখ্যাও খুবই কম। যদিও পেয়ারার ভরা মৌসুম শুরু হয়ে গেলে এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে বলে মনে করেন ভীমরুলি এলাকার বাসিন্দারা।
অপরদিকে বর্তমানে ভাসমান এ বাজার দু’টিতে মৌসুমের শেষ ও শুরুর ফসল আসতে দেখা গেছে। চাষিরা ক্ষেত থেকে সরাসরি ছোট ছোট ডিংগি নৌকায় করে ফসল নিয়ে আসছেন এই সকল অঞ্চলের ভাসমান হাটে।
বর্তমানে থাকা সবজি ও ফলের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের কাঁচা কলা ও মরিচ, কচু, লেবু, কাঁকরোল, পেঁপে, মিষ্টিকুমড়া, কাঁঠাল ও ডাবের আমদানি বেশি। একই সঙ্গে বাজারে পেয়ারার আমদানিও ঘটতে শুরু করেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাজার পেয়ারায় জয়লাব হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।
অন্য একজন চাষি জানান, আটঘর-কুড়িয়ানা ও ভীমরুলির ভাসমান হাট-বাজারে পেয়ারার আমদানি দিন দিন বাড়ছে। মৌসুমের শেষ দিকের ফল হিসেবে কাঁঠাল এখনো রয়েছে। তবে দাম অনেকটাই কমে গেছে। একটি মাঝারি আকারের কাঁঠাল চাষিদের কাছ থেকে ২০-৪০ টাকার মধ্যে কিনছেন পাইকাররা। লেবু, কাঁচা কলা, বোম্বাই মরিচের দামও আগের চেয়ে কম।
কারণ হিসেবে দূর-দূরান্তের পাইকার বাজারে না থাকাকে দায়ী করছেন চাষিরা। ধীরেন নামে এক চাষী বলেন, স্থানীয় ও আশপাশের জেলার পাইকাররা বর্তমানে আটঘর-কুড়িয়ানা ও ভীমরুলির ভাসমান বাজারে পণ্য কিনতে আসছেন। করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে দূর-দূরান্তের পাইকার তেমন একটা আসেন না। ফলে চাষিরা ফসলের দাম পাচ্ছে না।
সুজন নামে অপর এক চাষি বলেন, অনেকটাই সিন্ডিকেটের মতো সবজির বাজার চলছে, সব পাইকাররাই প্রায় কাছাকাছি দাম বলছে। এক্ষেত্রে চাষি উৎপাদিত ফসল বিক্রি না করেও পারছে না।
যদিও স্থানীয় পাইকাররা বলছেন, করোনার কারণে পরিবহন খরচ বাড়লেও বর্তমানে খুচরো বাজারে সবজির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। যে কারণে হিসাব কষে কিনতে হচ্ছে পণ্য। সব শঙ্কার মধ্যেই করোনাকালেও ভাসমান এসব বাজারে ডিঙি নৌকা, মাছ শিকারের চাঁই এর বিক্রি স্বাভাবিক রয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
এদিকে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন চাষিদের পণ্য বিক্রির প্রসার ও পাইকার ক্রেতা সংকট নিরসনে অনলাইনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। বিশেষ করে সিজনে অনলাইনে পেয়ারা বিক্রির উদ্যেগ নিয়েছে।