সৌমেন মন্ডল,প্রতিনিধি : রাজশাহী মহানগরীতে ভুয়া হোমিও ডাক্তারের ছড়াছড়ি। প্রশাসনের নাকের ডগায় এ সব ভুয়া চিকিৎসক জমজমাট ব্যবসা করলেও নেয়া হচ্ছে না কোন পদক্ষেপ। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পাস না করে, হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের রেজিস্ট্রেশন ও ড্রাগ লাইসেন্স ছাড়াই নামের আগে ডা. লিখে চেম্বার খুলে বসেছেন অনেকে। এদের কারণে প্রকৃত হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারদের সুনাম নষ্ট হচ্ছে।অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজশাহী নগরীর আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে ভুয়া হোমিও ডাক্তারের চেম্বার ও ক্লিনিক। এর মধ্যে মতিহার থানার সামনেই চেম্বার খুলে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ডে চিকিৎসক হিসেবে রেজিস্ট্রেশন,ডিএইচএমএস পাসের সনদ,ড্রাগ লাইসেন্স ও ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াই রোগীদের সাথে প্রতারনা করে দীর্ঘ ৭বছর ধরে ডাঃ নাজমুল হুদা চালিয়ে যাচ্ছন তার রমরমা চিকিৎসা ব্যবসা। চিকিৎসা সেবার কোন রকম সার্টিফিকেট ছাড়াই “নিহাল হোমিও হল”নামে চেম্বার প্রতিষ্ঠা করে অসহায় রোগীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ডাঃ নাজমুল হুদা । তার রোগীদের রোগ ভালো না হলে তিনি বলেন, “ধৈর্য্য ধরতে হবে, হোমিও ওষুধে রোগ সারতে একটু সময় লাগবেই, এ অবস্থায় রোগীরা অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা করাবে জানালে তিনি তাদের ভয় দেখিয়ে বলেন, কি দরকার, ওখানে গেলেই তো বলবে “অপারেশন করতে হবে, অযথা কাটাছেঁড়া করবে আর লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেবে’।
এদিকে রোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে কয়েকজন সাংবাদিকরা “নিহাল হোমিও হল” নামে ডাঃ নাজমুল হুদার চেম্বারে গিয়ে দেখতে পান ময়লা আবর্জনার স্তুপে ভরা তার চেম্বারটি। আর তার মধ্যে পুরোনো/ডেট এক্সপায়ার্ড ওষুধের বোতল। এগুলো সম্পর্কে ডাঃ নাজমুল বলেন হোমিও ওষুধের ডেট এক্সপায়ার হয় না।
ডাঃ নাজমুল হুদাকে তার বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ডে চিকিৎসক হিসেবে রেজিস্ট্রেশন,ডিএইচএমএস পাসের সনদ,ড্রাগ লাইসেন্স ও ট্রেড লাইসেন্স এর সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষা তার নাই, তবে তার আমার বাবা মরহুম ডাঃ শামসুল হুদা ও বড় ভাই মরহুম ডাঃ নাইমুল হুদা’র কাছ থেকে হাতে কলমে তিনি শিক্ষা নিয়েছিলেন। আর বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ডে চিকিৎসক হিসেবে রেজিস্ট্রেশন,ডিএইচএমএস পাসের সনদ,ড্রাগ লাইসেন্স ও ট্রেড লাইসেন্স আমার জন্য এগুলো লাগে না, তাছাড়া আমার কাছে কেউ চেক করার সাহসও রাখে না।
বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের এ কর্মকর্তা জানান ,ডাক্তার হিসাবে হোমিওপ্যাথি পড়াশোনার জন্য বাংলাদেশ সরকার স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ২টি হোমিওপ্যাথি আন্তর্জাতিক কোর্স বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড, ঢাকা অধিভুক্ত ডিএইচএমএস (ডিপ্লোমা ইন হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি ৪ বছর মেয়াদি) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের আওতাধীন বিএইচএমএস (ব্যাচেলর অব হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি ৪ বছর মেয়াদি) । হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার হিসাবে প্র্যাকটিস করার জন্য বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক প্র্যাকটিশনার অর্ডিনেন্স ১৯৮৩ এর বিধানাবলী মোতাবেক বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ডে নাম রেজিস্ট্র্রি করে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা শাস্ত্র অনুযায়ী চিকিৎসা করিবার অধিকার পাবার বাধ্যবাধ্যকতা রয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড, নিকুঞ্জ-২, খিলক্ষেত, ঢাকা এর অধিভুক্ত দেশের যে কোন হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ হতে ৪ বছর মেয়াদি ডি.এইচ.এম.এস পাস করার পর কলেজ হাসপাতাল হতে ৬ মাসের ইন্টার্নিশিপ করার পর বোর্ড হতে ডিএইচএমএস সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করতে হয়। তারপর তাকে ডিএইচএমএস কোর্সের প্রত্যেক বর্ষের সবগুলো নম্বরপত্র, ইন্টার্নিশিপ সার্টিফিকেট, কলেজ প্রশংসাপত্র, বোর্ডের ডিএইচএমএস কোর্সের সার্টিফিকেটসহ বোর্ডের ওয়েবসাইডে নির্দিষ্ট রেজিস্ট্রেশন ফরমে ব্যাংক ড্রাফটসহ আবেদন করতে হয়। বোর্ড কাগজ-পত্র যাচাইসহ বোর্ড কমিটির মিটিংয়ে অনুমোদন পেলে তাকে চিকিৎসা পেশার জন্য এবং আইনানুগ অধিকারের জন্য রেজিস্ট্রেশন নম্বরসহ রেজিস্ট্রেশন সনদপত্র (বাংলা বা ইংলিশ) প্রদান করে। যা বর্তমানে ৫ বছর পর পর নবায়ন যোগ্য। হোমিওপ্যাথি কোর্স করার পর রেজিস্ট্রেশন সনদপত্র ছাড়া কেহ নামের অগ্রভাগে ‘ডা.’ লিখতে পারে না।
গল্পটা এখানেই শেষ নয়, সাংবাদিকরা ফিরে আসার পরে হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের রেজিস্ট্রেশন ও ড্রাগ লাইসেন্স ছাড়াই ডাক্তার পরিচয়দানকারী ভূয়া ডাক্তার ডাঃ নাইমুল হুদার সকল তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার কারনে একদল মাস্তান নিয়ে সাংবাদিক সাগর নোমানীর বাড়ীতে হামলা চালান । এ সময় সাংবাদিক সাগর নোমানীকে না পেয়ে তার মাকে শাসিয়ে যান আর বলেন ” তোর ছেলেকে সাবধান করে দিস, যদি কোন সংবাদ মাধ্যমে আমার নামে কোন নিউজ হয়, তাহলে তোর ছেলেকে মেরে ফেলবো, আর সাথে যারা ছিলো তাদের কাউকেই ছাড় দেব না বলে হুমকি দিয়ে চলে জান তারা।
এদিকে নিজ বাড়ীতে এসে হুমকির বিষয়ে সাংবাদিক সাগর নোমানী বোয়ালিয়া মডেল থানায় ২৭ নভেম্বর রাতে একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। ডায়েরি নং-১৫০৬।
এবিষয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিবারন চন্দ্র বর্মন বলেন সাংবাদিক হুমকির বিষয়ে একটি ডায়েরি হয়েছে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যাবস্হা নেওয়া হবে।