চাঁপাইনবাবগঞ্জে পিঁয়াজ আমদানী বন্ধ হলেও বন্দরের চারপাশের বিভিন্ন আড়ৎতে মজুদের অভিযোগ ।

Loading

শামশুজ্জোহা বিদ্যুৎ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: ভারতে বন্যার অজুহাতে হঠাৎ করেই ভারত সরকার বাংলাদেশে পিঁয়াজ রপ্তানী বন্ধ করে দেয়। এতে করে অন্যান্য বন্দরের ন্যায় সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়েও বন্ধ হয়ে যায় পিঁয়াজ আমদানী। ফলে সারা দেশের ন্যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জেও একদিনের ব্যবধানী কেজি প্রতি ৩০ টাকা পিয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানী বন্ধ হলেও বন্দর সংলগ্ন অন্তত ৮ টি গুদাম সহ শিবগঞ্জ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন আড়ৎ গুলোতে মজুদ রাখা হয়েছে পিয়াঁজ। স্থানীয়দের দাবী প্রশাসন এসব আড়ৎগুলোতে অভিযান চালালেই দাম কমবে পিঁয়াজের।

ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী দেশে যে পরিমান পিয়াজ আমাদানি হয় তার প্রায় ৪০ভাগ আমদানি হয় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর সোনামসজিদ স্থল বন্দর দিয়ে। তবে সম্প্রতি ভারত হঠাৎ করে পিয়াজের দাম বৃদ্ধি ও পরে রপ্তানী নিষিদ্ধ করে।তবে সি এ্যান্ড এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের কোন সদস্য নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, গত ২৮ সেপ্টেম্বররের আগে যারা এলসি খুলেছে তাদের পিয়াজ বাংলাদেশে প্রবেশ এখনও অব্যহত রয়েছে এবং ভারতের মোহদিপুর বন্দরে কিছু পিঁয়াজভর্তি ট্রাক অবস্থান করছে। আর আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্টদের দাবী হঠাৎ করে ভারত সরকার এ পণ্যটি রপ্তানী বন্ধ করে দেয়ায় তাদের ব্যপক ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয়েছে।

এ ব্যাপারে মের্সাস মেহেদি ট্রেডাসের মালিক আতাউর রহমান জানান, তার গোডাউনে যে ২ ট্রাক পিঁয়াজ আছে তা সোমবার বাংলাদেশে এসেছে। পথিমধ্যে প্রবল বর্ষনের কারনে পিঁয়াজ গুলো ভিজে যাওয়ায় আনলোড করে শুকানোর পর আবারও মোকামে পাঠিয়ে দেয়া হবে। তিনি আরও জানান, স্টক করে দাম বৃদ্ধি নয় টানা বর্ষনের কারনে আমদানীকৃত পিঁয়াজ ভিজে যাওয়ায় সাময়িকভাবে বন্দর সংলগ্ন এ আড়তে শুকানোর জন্য রাখা হয়েছে । শুধু মের্সাস মেহেদী ট্রের্ডাসই নয় বন্দর সংলগগ্ন অন্যান্য আমদানীকারকরাও একই সুরে কথা বলেন।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, শুধু বন্দর এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে অন্তত ৮ টি বড় বড় গোডাউন রয়েছে মজুদকৃত পিঁয়াজের। সেসাথে শিবগঞ্জ ও সদরের আড়ৎগুলোতেও রয়েছে পিঁয়াজের মজুদ । তাই স্থানীয়দের দাবী মজুদদারদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন এখনই ব্যবস্থা নিলে বাজারগুলোতে পিঁয়াজের দাম কমে যাবে।

অন্যদিকে পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেড,সোনামসজিদ স্থল বন্দর শাখার পোর্ট ম্যানেজার মোঃ মাইনুল ইসলাম জানান,
ভারত থেকে পিঁয়াজ রপ্তানী বন্ধের আদেশের পর সোমবার বন্দর থেকে ৮টি এবং মঙ্গলবার ২০ টি পিঁয়াজের ট্রাক বন্দর থেকে ছেড়ে গেছে।বর্তমানে গত ২ দিনে কোন পিঁয়াজ ভর্তি ভারতীয় ট্রাক বন্দরে প্রবেশ না করলেও ২৮ সেপ্টেম্বরের আগের অর্ডারের পিঁয়াজগুলো বাংলাদেশে প্রবেশ করানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে আমদানীকারকরা।

এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রশাসন সদর উপজেলার বিভিন্ন পাইকারী বাজারগুলোতে তাদের মনিটরিং আরম্ভ করলেও বড় বড় আড়ৎগুলো ও অন্যান্য উপজেলা গুলোতে এখনও অভিযান আরম্ভ করেনি।মঙ্গলবার সদর উপজেলার পুরাতন বাজার এলাকায় ভ্রাম্যমান আদালত অভিযানে নামলে শহরে পিঁয়াজের মূল্য এক লাফে ১৫ টাকা কমে যায়।এ সময় আদালতের ম্যাজিষ্ট্রেট পিঁয়াজের দোকানগুলোকে অতিরিক্ত মূল্য না নেয়ার জন্য সর্তক করে দেয়।

এ ব্যাপারে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট রুহুল আমিন জানান,আদালত চলাকালে পিঁয়াজের অতিরিক্ত মূল্য নেয়ার সত্যতা পাওয়া যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের সর্তক করে দেয়া হয়েছে।এরপরও কাজ না হলে কঠোর অবস্থানে যাবে প্রশাসন।
অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক তাজকির- উজ-জামান জানান,নিয়মিত বাজার তদারকির অংশ হিসেবে এ অভিযান চালানো হয়েছে।ভবিষ্যতেও চালানো হবে এ অভিযান।পিঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সদর উপজেলার পাশাপাশি অন্যন্য উপজেলাগুলোতেও এ অভিযান অব্যাহত রাখা হবে।

প্রসঙ্গত ভারতীয় পিঁয়াজের দামবৃদ্ধি ও রপ্তানী স্থগিত হবার পরও আগষ্ট মাসে ২৩ হাজার ৪শ ৬২ টন ও সেপ্টেম্বর মাসে ২৩ হাজার ৩শ ১৬ টন পিঁয়াজ সোনামসজিদ বন্দর দিয়ে আমদানী হয়েছে বলে স্থল শুল্ক বন্দরের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান নিশ্চিত করেন।

এর আগে রোববার ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে পিঁয়াজ রপ্তানী বন্ধ করে দেয়ায় ঐদিনই দুপুর থেকে সোনামসজিদ বন্দর দিয়ে সব ধরনের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়।