মাগুরার শ্রীপুরের গোয়ালপাড়া খালের সেতুটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ যে কোন সময় দূর্ঘটনা ও প্রাণহানীর আশংকা বিদ্যমান ।

Loading

আশরাফ হোসেনপল্টু,মাগুরা প্রতিনিধি ঃ মাগুরার শ্র্র্রীপুর লাঙ্গলবাঁধ সড়কের কুমার নদ সংযোগ জিকে সেচ প্রকল্পের গোয়ালপাড়া খালের ওভার ট্যাংকি সেতুটি বর্তমানে চরম ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে ।

যে কোন মূহুর্তে দূর্ঘটনা ঘটার আশংকা বিরাজমান। ষাট দশকের শুরুর দিকে জি,কে সেচ প্রকল্প তাদের সেচ সুবিধা জোরদার করার জন্য শ্রীপুর সদর ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া খাল নামক স্থানে এস-১১/ কে খালের ৮ নং ট্যাংকি ওভার সেতুটি নির্মান করা হয় । এলাকার অধিকাংশ প্রবীণ জানান, সেতুটি যখন নির্মান করা হয়েছিল,তখন একমাত্র জিকে সেচ প্রকল্পের নিজস্ব যানবাহন চলাচল ও তাদের সেচ সুবিধা বাস্তবায়ন করার জন্যই এটি নির্মান করা হয়েছিল। জিকে প্রজেক্ট তখন ভাবেনি যে, ভবিষ্যতে এই সেতুটি বা সড়কটি এতো গুরুত্বপূর্ণ হবে বা ভারী ভারী যানবাহন চলাচল করবে।

যে কারনে সেতুটি তখন তেমন কোন সময়োপযোগি টেকসই করে নির্মান করা হয়নি। কিন্তু বর্তমানে শ্র্র্রীপুরÑলাঙ্গলবাঁধ সড়কটি অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ ব্যস্ততম সড়ক হওয়ায় প্রতিদিন অসংখ্য পণ্যবাহী হেভি লোড ট্রাক, পিক-আপ, কাভার্ড ভ্যান, তেলবাহী লড়ি, যাত্রীবাহী বাস,টেম্পুসহ যানবাহন এই সড়ক দিয়ে অহরহ যাতায়াত করছে। সেতুিিট দীর্ঘদিনের পুরাতন হওয়ায় এর উপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলার কারনেই মুলতঃ সেতুটির বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে ।

সেতটির কিছু কিছু অংশ খন্ড খন্ড করে ভাঙতে শুরু করেছে। সম্প্রতি পাথর বোঝায় কয়েকটি হেভি লোড ট্রাক সেতুটি ওপার দিয়ে পার হওয়ায় এর ভারে সেতুর উপরিভাগের মাঝখানের একটি অংশ ভেঙে বড় ধরণের গর্তে পরিনত হয়েছে এবং এর গোটা অংশ লম্বা-লম্বিভাবে মারাত্বক ফাটল দেখা দিয়েছে । অনেকদিন ধরে সেতুর রেলিং ভেঙ্গে ঝুলে রয়েছে এবং প্রবল পানির স্্েরাতের কারনে সেতুর তলদেশের পাকা পাটাতন ভেঙে চুর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এক কথায় সেতুটি বর্তমানে চরম ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে এবং যে কোন মুহুর্তে বড় ধরণের দূর্ঘটনা ও প্রাণহানীর আশংকা বিরাজ করছে । এছাড়াও এলাকাবাসী আরোও জানান, সেতুটি ক্ষতি গ্রস্থ হলে মাগুরা জেলার সাথে ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া ও রাজবাড়ী জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকাংশে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। তাছাড়া কৃষি কাজের ক্ষেত্রে পানির সেচ ব্যবস্থা সম্পূর্ণরুপে অচল হয়ে পড়বে। তখন এলাকার মানুষের দুঃখ-দুর্দশা ও দূর্ভোগের সিমা থাকবেনা। সেতুটি ক্ষতিগ্রস্থের সংবাদ পেয়ে মাগুরার পানি উন্নয়ন বোর্ড তড়িঘড়ি করে অতিসম্প্রতি সেতুটিকে ঝুকিপূর্ণ ঘোষণা করেন এবং সেতু এলাকায় সতর্কিকরণ নোটিশবোর্ড টাঙিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষনা করেন । কিন্ত আইনের কোন তোয়াক্কা না করে ভারী যানবাহন অবাধে চলছেই। এদিকে মিডিয়া কর্মীদের ফোন পেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হওয়ায় শুক্রবার থেকে তড়িঘড়ি করে সেতুটির ক্ষত-বিক্ষত স্থানে পুটিং-পাটিং ও রেলিং সংস্কারের কাজ শুরু করেছেন ।

এ বিষয়ে ব্রীজের পার্শ্ববর্তী হরিন্দী গ্রামের বাসিন্দা,বীরমুক্তিযোদ্ধা,মাগুরা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক সাংগঠনিক কমান্ডার মিঞা শাহাদাত হোসেন বলেন, জিকে প্রজেক্টের খাল গোয়ালপাড়ার এই পুরাতন সেতুটি যোগাযোগের ক্ষেত্রে এবং কৃষি কাজের সেচ ব্যবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে ব্যাপক ভুমিকা পালন করে আসছে । বর্তমানে সেতুটির যে ভগ্নদশা তাতে যেকোন সময় ব্রীজটি ভেঙ্গে গিয়ে বড় ধরণের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে । তাই সেতুটি যতদ্রæত সম্ভব সংস্কার করার প্রয়োজন বলে মনে করি ।
শ্রীপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও শ্রীপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মসিয়ার রহমান বলেন, শ্রীপুর-লাঙ্গলবাঁধ সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক ।

এই সড়কের গোয়ালপাড়ার খালের সংযোগ সেতুটির দূর্দশার বিষয়টি এলাকার লোকজন আমাকে বলেছেন এবং আমি নিজেও সেতুটির সমস্যা দেখেছি । তবে সেতুটির সমস্যা খুবই মারাত্বক ও ঝুকিপূর্ণ । ভারী যানবাহন বন্ধ না হলে যে কোন সময় দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। সেতুটি ভেঙ্গে গেলে এলাকার লোকজনের চরম ক্ষতিও হবে । তাই দ্রæত সংস্কারের বিষয়ে মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য মহোদয়কে অবগত করা হয়েছে । তাঁর নির্দেশনা পেলে সাধ্যমত কাজ করা হবে ।

মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সারোয়ার জাহান বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে বলেন,পুরাতন এই সেতুটির উপর দিয়ে কয়েকদিন পূর্বে ১০ চাকার হেভি লোড গাড়ি যাওয়ার কারনে সেতুটি বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্থের বিষয়টি জানার পর তৎক্ষনাত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং সেতুটি ঝুকিপূর্ণ ঘোষণা করে সেখানে সতর্কিকরণ নোটিশবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছেন। তাছাড়া এ সেতু দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেজ্ঞাও আরোপ করেছেন। ক্ষতিগ্রস্থ সেতু হিসেবে সনাক্ত করে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগতও করানো হয়েছে । বর্তমান অবস্থায় সংস্কারের বিষয়ে কোন চিন্তা-ভাবনা না থাকলেও আগামী বাজেটে শুষ্ক মৌসূমে যতটুকু সম্ভব সংস্কার কাজ করা হবে বলে তিনি জানান ।

মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর এবিষয়ে বলেন,বিষয়টি এলাকাবাসী আমাকে দৃষ্টিগোচর করেছেন। যতদ্রæত সম্ভব গুরুত্বপূর্ণ সেতুটি সংস্কারের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে মর্মে আশ্বাস প্রদান করেন।