ময়মনসিংহে স্বামীকে হত্যার পর সর্বস্ব লুটে নিলো প্রতারক স্ত্রী

Loading

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ ময়মনসিংহের ঘাগড়া ইউনিয়নের পুটিয়ালীর চর এলাকার বাসিন্দা নৌ বাহিনীর সৈনিক রাশিদুল ইসলাম রাসেল। গত কয়েক বছর আগে বি. বাড়িয়া সদরের মজলিশপুর এলাকার রহমত আলীর কণ্যা লিমা আক্তারের সাথে মোবাইল ফোনে পরিচয় হয় তার। পরবর্তীতে প্রেম বিনিময়ের পর বিয়ের প্রস্তাব ও লিমাদের বাড়িতে বিয়ে করতে আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে যায় রাসেল। তবে, লিমার পরিবারের পক্ষ থেকে ১২ লক্ষ টাকা কাবিন দাবি করা হলে রাসেল ও তার পরিবার সেখান থেকে চলে আসে। পরবর্তীতে রাসেল অন্যত্র বিয়ে করলেও প্রতারণার উদ্দেশ্যে প্রেমের ফাঁদ তৈরী করে রাসেলের বিয়ে টিকতে দেয়নি লিমা। প্রেমের সম্পর্কের টানে তার কাছে ছুটে আসতে চায় লিমা। এক পর্যায়ে মোটা অঙ্কের টাকায় কাবিন ধার্য করে রাসেল ও লিমার বিয়ে হয়। পরবর্তীতে স্বামী রাসেলের বাড়িতে ঘর সংসার শুরু করে লিমা। বাড়িতে রাসেলের ছোট ভাইয়ের বউ এবং বৃদ্ধ মা বসবাস করতো।

কিছুদিন না যেতেই শ্বশুর বাড়ির কাউকে সহ্য করতে না পেরে সবার সাথে ঝগড়া বিবাধের মধ্যে থাকতো লিমা। বাধ্য হয়ে বউয়ের প্ররোচণায় ছোট ভাইকে বাড়ি থেকে অন্যত্র সরিয়ে দিতে বাধ্য হয় রাসেল। এমনকি বউ এর কথামতো নিজ মাকেও বাড়ি থেকে বের করে দেয় রাসেল। এর মধ্যে রাসেল তার নৌবাহিনীর চাকুরী থেকে সেচ্ছায় অবসরে গিয়ে ময়মনসিংহের হেড পোস্ট অফিসে ২২ লক্ষ টাকা জমা রাখেন এবং এর নমিনী রাখেন তার মা স্ত্রী লিমাকে। নৌ বাহিনীর চাকরী ছেড়ে রাসেল ঢাকায় একটি বেসরকারী কোম্পানীতে চাকুরীতে যোগ দেন। চাকুরীর সুবাদে তাকে ঢাকায় একা বসবাস করতে হয়।

এদিকে ময়মনসিংহে স্বামীর বাসা খালি পেয়ে স্থানীয় বখাটে ও অসাধু যুবকদের সাথে মেলামেশা শুরু করে রাসেলের স্ত্রী লিমা আক্তার। এমনকি বাসায় অচেনা লোকজনের আসা যাওয়া ও অবৈধ কার্যকলাপ শুরু হয়ে যায়। এক পর্যায়ে রাসেল তার স্ত্রীর লিমার এসব অবৈধ ও অসামাজিক কর্মকান্ডের বিষয়ে জানতে পারে।

এ বিষয়ে রাসেল প্রতিবাদ করতে গেলে কয়েকবার লিমার সাথে ঝগড়া হয়। একদিন লিমা তার স্বামী রাসেলকে ঘুমের মধ্যে শ্বাস রোধ করে হত্যা চেষ্টা চালায়। এভাবে কয়েক দিন হত্যা চেষ্টা চালানো হয় রাসেলকে। এর মধ্যে অপর একদিন গলায় জি আই তার পেচিয়ে হত্যাচেষ্টা্ ও অন্য দিন দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা চালায় লিমা। মূলত: রাসেলে জমি ও বাড়ি নিজ নামে নিয়ে তা ভোগ করার উদ্দেশ্যে সে এসব ষড়যন্ত্রে নামেছিল বলে জানা গেছে।

এর আগেও একাধিক বিয়ে করে সাবেক স্বামীদের সম্পত্তি দখল করার অভিযোগ রয়েছে লিমার বিরুদ্ধে। মূলত রাসেলের বাড়ি ও পোস্ট অফিসে জমা রাখা ২২ লক্ষ টাকা আত্মসাথের উদ্দেশ্যে স্থানীয় অসাধু লোকজনদের সাথে মেলামেশা শুরু করে লিমা।

পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারী হঠাৎ ঢাকা থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে মোটরসাইকেলে করে আসার সময় ভালুকায় সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মারা যায় রাসেল। এলাকাবাসীর সন্দেহ, এটি কোন দুর্ঘটনা নয়, লিমা তার স্বামী রাসেলকে পরিকল্পিতভাবে ভাড়া করা পিকআপে চাপা দিয়ে হত্যা করে। কেননা, পিকআপটির চালক লিমার পরিচিত এবং সড়ক দুর্ঘটনার পর লিমা বাদি হয়ে চালকটির বিরুদ্ধে মামলা করে সেই মামলা আবার প্রত্যাহার করে নেয়।

লিমার স্বামী রাসেল মারা যাওয়ার পর পরই রাসেলের জমা রাখা ২২ লক্ষ টাকা তার শ্বাশুড়িকে বাদ দিয়ে পোস্ট অফিসের অসাধু কর্মকর্তা ও স্থানীয় বখাটে যুবকদের যোগসাজসে পুরো টাকা নিজের নামে তুলে নেয়। এক্ষেত্রে ২২ লক্ষ টাকার ভাগী হয় লিমার কুকর্মের সঙ্গীরা। শুধু ২২ লক্ষ টাকাই নয়, প্রয়াত স্বামী রাসেলের সব সম্পত্তি লুট করতে তার বাড়ির জমির পুরোটাই কৌশলে নিজ নামে খারিজ করে নেয়।

একের পর এক কুকর্ম ও লুটের পর সব শেষে গতবছর ৯ডিসেম্বর গভীর রাতে স্থানীয় এক বখাটের সহায়তায় বাড়ির সব মালামাল ট্রাকে তুলে পালিয়ে যায় লিমা। এর পর থেকে লিমা ও রাসেলের শিশু সন্তানের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে লিমার কুকর্মের সাথে জড়িত স্থানীয় কয়েকজন বখাটের অত্যাচারে নিজ বাড়িতে থাকতে পারছেনা তার শ্বাশুড়ি।

বিষয়টি অবগত করে ময়মনসিংহের কতোয়ালী থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি নং-২৭৪২ করেছেন লিমার শ্বাশুড়ি। যে কোন সময় তার বাড়িটি বিক্রি করে দিতে পারে লিমা এমন আশঙ্কায় রয়েছেন তার বৃদ্ধ বিধবা শ্বাশুড়ি। এই দুষ্কৃতিকারী ও প্রতারক লিমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।