সাভারে ছাত্রলীগের পরিচয়ে জমি দখলের চেষ্টা, ভাংচুর, নারীসহ আহত ৫

Loading

সাভার প্রতিনিধি: সাভারে ছাত্রলীগের পরিচয়ে প্রায় ৩০/৪০ জন সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে রাতের আধারে জমি দখলে অভিযোগ উঠেছে সাভার পৌর ছাত্রলীগের ৭নং ওয়ার্ড সভাপতি পরিচয়দানকারী রায়হান ইসলাম রিপনের বিরুদ্ধে। তার নেতৃত্বে বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙ্গে দিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় জমির মাকিলদের উপর হামলা চালানো হয়। তাদের সন্ত্রাসী হামলায় জমির মালিক মালিক পারভীন আক্তার ও স্বামীসহ ৫ জন আহত হয়েছে।

এ ঘটনায় পারভীন আক্তারের স্বামী শামসুল আলম বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় রায়হানসহ ২৫/৩০ জনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।এছাড়া ছাত্রলীগ পরিচয়দানকারী এই রায়হানের বিরুদ্ধে সাভার বাজার বাসস্টান্ডে অবৈধভাবে হকার বসিয়ে তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। ছাত্রলীগ সভাপতি পরিচয়দানকারী চাঁদাবাজ রায়হান ইসলাম রিপন চলতি বছরের ২৯ অক্টোবর মঙ্গলবার সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে সাধারণ হকারদের কাছ থেকে চাঁদার টাকা উত্তোলনের সময় হাতেনাতে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। এতে রায়হানসহ তার সহাযোগী কয়েকজনের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় একটি চাঁদাবাজী মামলা দায়ের হয়েছে।

তবে এ ব্যাপারে সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক ও সাভার পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি আতাউর রহমান অভি নিশ্চিত করে জানান, ছাত্রলীগের সভাপতি পরিচয়দানীকারী রায়হান ইসলাম রিপন ছাত্রলীগের কেউ নন।

জানা গেছে, গত ২২ ডিসেম্বর রবিবার সকালে ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে রায়হান ইসলাম রিপনসহ ৩০/৪০ জন সন্ত্রাস বাহিনী নিয়ে সাভার পৌর এলাকা স্মরণিকা মহল্লার বাসিন্দা শামসুল আলমের স্ত্রী’র পারভীন আক্তার এবং একই এলাকার বাসিন্দা নাজমুস সাকিব ক্রয় সূত্রে এক শতাংশ ৮০ শতাংশ জমির মালিক।যার আনুমানিক মুল্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা। রায়হান ইসলাম রিপন তার বাহিনী নিয়ে এ জায়গাটি দখলের চেষ্টা চালায়।

এসময় জমির মালিকরা পুলিশের সহাযোগিতা নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করলেও ঐদিন রাতে রায়হানের নেতৃত্বে পুনরায় রায়হান তার গুন্ডা বাহিনীকে নিয়ে জমি দখলে মরিহা হয়ে উঠে জমির উপরের থাকা স্থপনা দোকান ঘর এবং সিঁড়ি ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়। এতে জমির মালিক পারভীন আক্তার ও তার স্বামী শামসুল আলম এবং তাদের ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক পাশা এবং জমির আরেক মালিক নাজমুস সাকিব ভাংচুরের ঘটনা শুনে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের বাধা সৃষ্টি করে। এসময় রায়হানসহ তার সহযোগিরা তাদের উপর হামলা করে পুনরায় ভাংচুর করে পালিয়ে যায়।

পরে স্থানীয় এলাকাবাসী তাদের আহত অবস্থায় উদ্ধার করে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করতে নিয়ে গেলে ছাত্রলীগ পরিচয়কারী নেতা রায়হান তার গুন্ডা বাহিনীকে সাথে নিয়ে পুনরায় সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রর সামনে হামলা চালায়। এসময় আহতরা হাসপাতালে ভিতরের প্রবেশ করে হামলা থেকে রেহাই পায়। সন্ত্রাসী রায়হানের এমন কর্মকান্ডটি ‘টক অব দ্যা সাভার’-এ পরিণত হয়েছে। হঠাৎ এমন সন্তাসীর কর্মকান্ডে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন জেগেছে, কে এই রায়হান।

এ ব্যাপারের জমির মালিক পারভীন আক্তারের স্বামী শামসুল আলম জানান, জালেশ্বর মৌজাস্থিত আমাদের বশতবাড়ির বাউন্ডারী ওয়াল ঘেঁষা আর এস-১১৬ ও ১১৮ নং দাগের ১.৮০ শতাংশ জমি (ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ঘেঁষা পূর্বপাশে) আশপাশের সকলের জ্ঞাতসারে জমির মালিক জনৈক সাহিদা আক্তার ও নাদিয়া আরফিন রিয়া তাদের ওয়ারিশমূলে সঠিক প্রাপ্য অংশের আরএস নামজারি করে আলাদা জোত খুলে খাজনা পরিশোধ করে গত ০১/০৩/২০১৭ ইং জাকিয়া পারভীন (৪২) এর নামে ১.০৫ শতাংশ এবং মো: আবু বক্কর সিদ্দিক (২৩) এর নামে ০.৭৫ শতাংশ জমি হস্তান্তর, ভোগদখলসহ সর্বময় ক্ষমতা সাভার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রি মূলে বুঝাইয়া দেয়। নাজমুস সাকিব ও পাভীন আক্তার গত ২৪ এপ্রিল সাভার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে এ জমি রেজিস্ট্রমূলে ক্রয় করি।

জমিটি ক্রয়ের পর থেকেই মরহুম সুমন আলীর বড় মেয়ের জামাই সাইফুল ইসলাম অপু ও সুমনের আরেক মেয়ে সাকিয়া আফরিন সাকির প্রেমিক ছাত্রলীগ নেতা পরিচয়কারী রায়হান ইসলাম রিপন বিভিন্নভাবে জমির দখলচ্যুত করার জন্য নানাবিধ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে এবং আমিসহ আমার পরিবারের উপর দিনরাত প্রাণনাশের হুমকী দিয়ে আসছে। এছাড়া সন্ত্রাসী ও ছাত্রলীগ নেতা পরিচয়কারী রায়হানের নেতৃত্বে ৩০/৪০ জন সন্ত্রসাী ধারালো অস্ত্রসহ গত ২২ ডিসেম্বর দিনে ও রাতে আমাদের জমি দখলের চেষ্টা ও আমাদের পরিবারের উপর তিন বার হামলা চালিয়েছে। এঅবস্থায় আমরা এই সন্ত্রাসীদের হুমকীতে অসহায় হয়ে পড়েছি।

এ ব্যাপারের সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক জানান, রায়হান নামে সাভার উপজেলা ও পৌরসভা এবং ওয়ার্ডে ছাত্রলীগের কোন নেতা বা কর্মী নেই। তবে এক রায়হানের বিরুদ্ধে আমাদের কাছে ছাত্রলীগের সভাপতি পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে চাঁদাবাজী, জমি দখল, নারী কেলেঙ্কারীসহ বিভিন্ন অভিযোগ এসেছে।

তিনি আরো জানান, কিছুদিন আগেও ছাত্রলীগের পরিচয় দিয়ে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় হকারদের কাছ থেকে চাঁদাবাজী করতে গিয়ে চাঁদার টাকাসহ হাতেনাতে পুলিশের হাতে আটক হয়েছে। তিনি সাভার উপজেলার সকলকে অবগত করার জন্য জানিয়েছেন রায়হান ছাত্রলীগের কেউ নন। রায়হান ছাত্রলীগের কোথায় নাম ভাঙ্গিয়ে অপকর্মে জড়ালে তার দায় ছাত্রলীগ নিবে না। এছাড়া রায়হানের অপকর্মের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী স্বোচ্চার হয়ে তাকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশের হাতে সোপর্দ করতে অনুরোধ জানান।

সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক তাহমিদুল ইসলাম বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে দু’জন চাঁদাবাজকে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড থেকে আটক করা হয়েছিলো। তাদের মধ্যে ছাত্রলীগের সভাপতি পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজী করছিলেন রায়হান ইসলাম রিপন এবং তার সহাযোগি হান্নান নিজেকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়াতো।

এ ঘটনায় সাভার মডেল থানায় ইস্রাফিল বাদী হয়ে ১২ জনের নামে চাঁদাবাজির লিখিত অভিযোগ দিলে রাতেই মামলা রেকর্ড হয়। এ মামলায় রায়হানসহ আসামী হলো ১২ জন।